Home » খাদ্যদ্রব্য কৌটাজাতকরণ এর উপায়!
খাদ্যদ্রব্য কৌটাজাতকরণ এর উপায়!

খাদ্যদ্রব্য কৌটাজাতকরণ এর উপায়!

খাদ্যদ্রব্য কৌটাজাতকরণ খাদ্য সংরক্ষণের একটি আধুনিক ও উন্নততর পদ্ধতি। এটি এমন একটি পদ্ধতি যেখানে খাদ্যদ্রব্যকে জীবাণুমুক্ত করে বায়ুরােধী অবস্থায়, প্রিজারভেটিভস সহকারে কৌটার মধ্যে খাদ্যমানকে অক্ষুণ্ণ রেখে সংরক্ষণ করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় খাদ্যের জীবাণু মরে যায় এবং অনাকাঙ্খিত অণুজীব জন্মাতে বা বংশবিস্তার করতে পারে না। তো, বিজ্ঞান নিউজের আজকের পোস্টে আমরা— খাদ্যদ্রব্য কৌটাজাতকরণ এর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানব! চলুন শুরু করা যাক!

খাদ্যদ্রব্য কৌটাজাতকরণ এর উপায়: 

খাদ্যদ্রব্য কৌটাজাতকরণ এর মূলনীতি:

প্রিজারভেটিভস খাদ্যদ্রব্যকে অক্সিডেশন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে খাদ্যদ্রব্যের গুণগত মান প্রায় অক্ষুণ্ণ থাকে এবং এটি নষ্ট হয় না বা পচে যায় না। এভাবে খাদ্যদ্রব্যকে অনেকদিন পর্যন্ত, এমনকি দুই তিন বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।

খাদ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কৌটাজাতকরণ একটি উন্নতমানের পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে খাদ্যকে প্রক্রিয়াজাত করে উপযুক্ত প্রিজারভেটিভস যােগ করে পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত কৌটার মধ্যে নেওয়া হয়। কৌটাকে ফুটন্ত পানি বা বাষ্পের সাহায্যে উত্তপ্ত করে বায়ুরােধী করা হয়। এ প্রক্রিয়ার নাম একজসটিং।

এরপর কৌটার মুখ ঢাকনা দ্বারা এঁটে খাদ্যকে সুরক্ষিত করা হয়। ফলে খাদ্যে মুক্ত পানির উপস্থিতি বন্ধ হয় এবং অণুজীব জন্মাতে ও বংশবিস্তার করতে অনুকূল পরিবেশ পায় না। অতঃপর একে স্টেরিলাইজেশন করা হয়। কৌটাকে ঠান্ডা করে, লেবেল লাগিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। এভাবেই খাদ্যদ্রব্য কৌটাজাতকরণ এর কাজ সম্পূর্ণ করা হয়।

এ প্রক্রিয়ায় মাছ, মাংস, বিভিন্ন ধরনের ফল, সবজি সংরক্ষণ করা যায়। ফল সংরক্ষণে প্রিজারভেটিভ হিসেবে চিনি এবং সবজি সংরক্ষণে খাদ্য লবণের দ্রবণ ব্যবহার করা হয়। মাছ-মাংস সংরক্ষণের ক্ষেত্রে লবণ ও চিনি উভয় দ্রবণকেই প্রিজারভেটিভস হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

এবার আমরা খাদ্যদ্রব্য কৌটাজাতকরণ এর ধাপগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানব!

➡️ আরও পড়ুন: বাংলাদেশ থেকে অনলাইনে আয় করার উপায়!

খাদ্যদ্রব্য কৌটাজাতকরণ

খাদ্যদ্রব্য কৌটাজাতকরণ প্রণালি বেশ কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়। ধাপগুলোে হলাে—

কাঁচামাল সংগ্রহ

কৌটাজাতকরণের ক্ষেত্রে সব সময় উন্নতমানের উপাদানকেই বেছে নেওয়া হয়। ফল, শাক-সবজি, মাছ-মাংস সবক্ষেত্রেই উত্তম দ্রব্যগুলােকে নির্বাচন করা হয়। কারণ উন্নতমানের খাদ্যদ্রব্য কৌটাজাত করলে ব্যবহারের সময় উন্নত মানেরটাই পাওয়া যায়।

শ্রেণিবিন্যাস করা

খাদ্যদ্রব্যের আকার, বর্ণ, পরিপক্কতা, পুষ্টি, কোনাে রকম আঘাত থেকে মুক্ত, জীবাণু বা কীটপতঙ্গের আক্রমণ থেকে মুক্ত ইত্যাদি বিষয়কে সামনে রেখে এদেরকে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়। সঠিক শ্রেণিবিন্যাসের মাধ্যমে ভােক্তা সুষম খাদ্যদ্রব্য পেতে পারে। এর ফলে খাদ্যের তৈরি, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও ব্যবহার সবই উৎকৃষ্ট মানের হয়।

ওজন নেওয়া

শ্রেণিবিন্যাস করার পর উত্তম খাদ্যদ্রব্যকে কৌটাজাতকরণের জন্য প্রস্তুত করা হয়। এ সময় অবশ্যই ব্যবহৃত ও অব্যবহৃত খাদ্যের ওজন করা হয়। ফলে শতকরা কত অংশ খাদ্যদ্রব্য সফলতার সাথে কৌটাজাত হয়েছে তার সঠিক ধারণা পাওয়া যায়। এটি পণ্যের মূল্য নির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ধৌতকরণ

প্রায় সব ধরনের খাদ্যদ্রব্যের মধ্যেই কিছু না কিছু পরিমাণ ময়লা, ধুলোবালি, জীবাণু লেগে থাকে। খাদ্যদ্রব্যকে প্রাথমিকভাবে ধৌত করে ময়লা, ধুলোবালি দূর করে নেওয়া হয়। অতঃপর বিশুদ্ধ পানিতে বেশ কিছু সময় ডুবিয়ে রাখা হয়। প্রয়ােজনে উচ্চচাপের পানির প্রবাহ ব্যবহার করে ধৌত করে নেওয়া হয়। ফলে বাহ্যিক ময়লা ও জীবাণু অনেকাংশে দূর হয়।

খােসা মুক্তকরণ ও টুকরাকরণ

মাছ-মাংসের ক্ষেত্রে চর্বি, হাঁড় ও অভক্ষণীয় অংশ আলাদা করা হয়। ফলের ক্ষেত্রে খােসা, বােটা ও বীজ থাকলে তাও অপসারণ করা হয়। শাক-সবজির ক্ষেত্রে এদের অপ্রয়ােজনীয় অংশ অপসারণ করা হয়। অতঃপর খাদ্যদ্রব্যকে পরিমিত আকারের টুকরোয় পরিণত করা হয়। টুকরো যেকোনাে আকারের হতে পারে। তবে পাত্রের মুখের আকারের ওপর নির্ভর করেই টুকরো করা হয়।

ব্লাঞ্চিং

খাদ্যদ্রব্যকে কৌটাজাতকরণ এর ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। এ পর্যায়ে খাদ্যদ্রব্যকে ফুটন্ত পানিতে অথবা বাল্পের সাহায্যে ৫-১০ মিনিট সময় উত্তপ্ত করা হয়। ফলে খাদ্যদ্রব্যের জীবাণু মুক্ত হয়। খাদ্যের অসহনীয় ও কটু ঘ্রাণ থাকলে তা অপসারিত হয়। এনজাইম সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। শাক-সবজির পিচ্ছিল পদার্থ থাকলে তাও অপসারিত হয়। এ প্রক্রিয়ার শেষে খাদ্যদ্রব্য আয়তনে কমে যায়; ফলে কৌটায় সাজানাে সহজ ও সুষম হয়। এ পর্যায়ে খাদ্যদ্রব্যের রান্নার কাজ কিছুটা সম্পন্ন হয়।

➡️ Try This: Convert JPG Image To PNG!

কৌটায় খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণ

ব্লাঞ্চিং শেষে খাদ্যদ্রব্যের টুকরোগুলােকে কৌটার মধ্যে এমনভাবে সাজানাে হয় যেন টুকরোগুলাের মাঝে মাঝে এবং টুকরোগুলোর ওপরিভাগে কিছু জায়গা ফাঁকা থাকে। এর ফলে খাদ্যে যুক্ত প্রিজারভেটিভস; যেমন- খাবার লবণের দ্রবণ, চিনির দ্রবণ, ভিনেগার, অ্যালকোহল, বেনজোয়িক অ্যাসিড, অ্যাসকরবিক অ্যাসিড, সরবিক অ্যাসিড প্রভৃতি প্রিজারভেটিভস সুষমভাবে সর্বত্র পৌঁছাতে পারে। উপরন্তু তাপ প্রয়ােগের ফলে তাপ সুষমভাবে খাদ্যের সব জায়গায় পৌঁছাতে পারে।

কৌটায় প্রিজারভেটিভস যােগ করা

কৌটায় ফল সংরক্ষণের ক্ষত্রে ৩০–৪০% ঘনমাত্রার চিনির দ্রবণকে প্রিজারভেটিভ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। শাক-সবজিতে ১.৫- ২.৫% খাদ্য লবণের দ্রবণ এবং মাছ-মাংসের ক্ষেত্রে সাধারণত ৭-১৫% খাবার লবণের দ্রবণ ব্যবহার করা হয়। খাদ্যের মধ্যে অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ; যেমন- ভিনেগার, অ্যাসকরবিক অ্যাসিড, সােডিয়াম বেনজোয়েট, ইথানল, কেএমপি, সােডিয়াম নাইট্রেট; ইত্যাদিকে প্রিজারভেটিভস হিসেবে যােগ করা হয়।

একজসটিং ও সিলিং

খাদ্যদ্রব্যকে কৌটায় নিয়ে উপযুক্ত প্রিজারভেটিভস যােগ করে, কৌটার অংশ পানিতে ডুবিয়ে ৯৫°–১১০°C তাপমাত্রায় ৫-৭ মিনিট উত্তপ্ত করা হয়। এর ফলে কৌটার ভেতরের সব বায়ু বেরিয়ে যায়। বায়ুর অনুপস্থিতিতে অণুজীব জন্মাতে পারে না। এই প্রক্রিয়াকে একজসটিং বলে। এমনকি একজসটিং সম্পন্ন হলে ঢাকনা দ্বারা এর মুখ ভালােমতাে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়াকে সিলিং বলে। এ প্রক্রিয়া খুব দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করা হয়। এ প্রক্রিয়ার সময় লক্ষ রাখা প্রয়ােজন- পাত্রটি যেন সম্পূর্ণভাবে বায়ুরােধী হয়! সম্পূর্ণ বায়ুরােধী না হলে অণুজীব জন্মানাের সম্ভাবনা থেকে যায়।

স্টেরিলাইজিং

কৌটা সিলিং করার পর স্টেরিলাইজিং বা রিটটিং করা হয়। এক্ষেত্রে যেসব খাদ্যের মধ্যে অ্যাসিড বেশি থাকে, তাদেরকে ৯০°–১০০°C তাপমাত্রায় প্রায় ৩০ মিনিট সময়কাল ধরে স্টেরিলাইজিং করা হয়। আর যেসব খাদ্যে অ্যাসিড কম থাকে তাদের ক্ষেত্রে প্রায় ১২০°C তাপমাত্রায় ১.৫ – ২ ঘণ্টা সময় ধরে স্টেরিলাইজিং করা হয়। এ প্রক্রিয়ার ফলে কৌটার মধ্যের সব অণুজীব মরে যায় এবং রান্নার কাজও প্রায় সম্পন্ন হয়।

সংরক্ষণ

স্টেরিলাইজিং করার পর খাদ্য ভর্তি কৌটাকে পানি থেকে তুলে এনে ধীরে ধীরে ঠান্ডা করা হয়। কৌটা ঠান্ডা হওয়ার পর এর গায়ে লেবেল এঁটে; পণ্যের বিবরণ, উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ প্রভৃতি উল্লেখপূর্বক সংরক্ষণ করা হয়। সংরক্ষণের ক্ষেত্রে শুষ্ক, ঠান্ডা ও আলােকবিহীন স্থান উৎকৃষ্ট। পরে একে সুবিধামতাে বাজারজাত করা হয়।

➡️ আরও পড়ুন: সেরা ৭টি দরকারি অ্যাপস!

*********

প্রিয় পাঠক, এই ছিল— খাদ্যদ্রব্য কৌটাজাতকরণ এর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত। আশা করি সবাই আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়েছেন। কেউ কোনো কিছু না বুঝলে কিংবা কারও কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এই ধরনের আরও পোস্ট পড়তে বিজ্ঞান নিউজে চোখ রাখুন। ধন্যবাদ।

**********

⏩ ডিসক্লেইমার: এটি একটি স্পন্সরড গেস্ট পোস্ট। ফলে এই কন্টেন্টে বর্ণিত সকল তথ্যসহ পুরো কন্টেন্টের দায়ভার IscoEarn.com এর। এই কন্টেন্টের কোনো বিষয়ে আমাদের সাইট [BigganNews.com] কোনোপ্রকার দায়ী থাকবে না। গেস্ট পোস্টের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন— ফেসবুকে । ধন্যবাদ। 

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন:

2 thoughts on “খাদ্যদ্রব্য কৌটাজাতকরণ এর উপায়!”

  1. তথ্যবহুল পোস্ট। ধন্যবাদ লেখককে এবং বিজ্ঞান নিউজকে।

মন্তব্য করুন: