Home » পানি পড়া – তেল পড়া কীভাবে কাজ করে? – placebo effect
পানি পড়া - তেল পড়া কীভাবে কাজ করে- placebo effect

পানি পড়া – তেল পড়া কীভাবে কাজ করে? – placebo effect

কখনো ভেবে দেখেছেন মাঝে মাঝে পানি পড়া কেন কাজ করে? অনেক সময় দেখা যায় বাড়ির সবচেয়ে আদরের মেয়েটা অসুস্থ। হাসপাতালে এক রোগীর জন্য ২০টা দর্শনার্থী। কিছুক্ষণ পর পর রোগী আঁতকে উঠছে। আর রোগীর লোক নার্স নার্স করে ডেকে হাসপাতাল মাথায় তুলছে। এই সময় রোগীর জন্য চিকিৎসা হচ্ছে DW। রোগী যখন ইচ্ছা করে বেশি অসুস্থতার ভান করে আর রোগীর লোকদের অস্থির করে তোলে এই সময় দেওয়া হয় DW। কী এই DW! D= distilled w=water। যা দিলে রোগীর সামান্য ব্যথা লাগা ছাড়া তেমন কোনো কাজ করে না! তবুও ৯০% রোগী এই DW নিয়ে সুস্থতা অনুভব করে। এটা যে পদ্ধতিতে কাজ করে এরই নাম placebo effect.

আমার নিজের একটা গল্প বলি, আমি একদিন খুব বেশি টেনশনে আছি। কিছুই ভালো লাগছে না। ঘুম দিলে মনে হয় ভালো লাগবে। ঘুমের ওষুধ চাইলাম রুম মেটের কাছে। রুম মেট ঘুমের ওষুধ দিলো, খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। পরবর্তীতে জানতে পারলাম, সেইটা আসলে কোনো ঘুমের ওষুধ ছিল না।  ছিল ডমপেরিডন। যা খেয়ে আমি দিব্যি ঘুমিয়েছি।

পানি পড়া – তেল পড়া কীভাবে কাজ করে?

এই ওষুধগুলো যেভাবে কাজ করেছে হুজুরের পানি পড়া কিংবা মন্ত্র পড়া একইভাবে কাজ করে। মানুষ তাদের প্রতি বিশ্বাস রেখে পানি পড়া খায় যার ফলে রোগ সেরে যায়। তবে সত্যিকারের কোনো রোগ placebo effect দিয়ে সাড়ানো সম্ভব না। সাধারণত মাথা ব্যথা, পেট ব্যাথা, কোমর ব্যাথা, ভালো না লাগা এসব ক্ষেত্রেই শুধু  placebo effect কাজ করে।

পানি পড়া - তেল পড়া কীভাবে কাজ করে
পানি পড়া – তেল পড়া কীভাবে কাজ করে – placebo effect

কিছু কিছু ওষুধ কোম্পানি ও প্লাসিবো ইফেক্টের কথা মাথায় রেখে ওষুধ ডিজাইন করে। গবেষণায় দেখা গেছে, কম দামি পেইনকিলারের চেয়ে বেশি দামি পেইনকিলার ভালো কাজ করে, ছোটো ট্যাবলেটের চেয়ে সাইজে বড়ো ট্যাবলেট বেশি কাজ করে, সাদা ট্যাবলেটের চেয়ে রঙ্গিন ট্যাবলেট ভালো কাজ করে। ওষুধ কোম্পানিগুলো এইভাবে আকর্ষণীয় করে ওষুধ বানায়।

 

পানি পড়া - তেল পড়া কীভাবে কাজ করে

প্লাসিবো ল্যাটিন শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে- I shall Please, অর্থাৎ, ব্যাপারটা সন্তুষ্টির সাথে জড়িত। সম্ভবত ভণ্ড সাধু-সন্ন্যাসীরা অনেক আগে থেকেই প্লাসিবোর ব্যবহার জানতো। প্লাসিবো ব্যবহার করেই তারা আত্মবিশ্বাসের সাথে পানি পড়া বা তেল পড়া নিয়ে ব্যবসা করত। সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ এর লালসালু উপন্যাসের কথা বলতে পারি। তিনি জানতেন যে গ্রামে কোনো পুরোনো কবর নেই, তারপরেও জোর গলায় বললেন, “গ্রামের কোনায় মোদাচ্ছের পীরের মাজার রয়েছে। স্বপ্নে মোদাচ্ছের পীর আমাকে দেখা দিয়ে বলেছেন যে আমার কবর বাঁধাই করে এখানে মাজার বানাও”। সেই কথিত স্বপ্ন অনুযায়ী মজিদ সেখানে মাজারের ব্যবসা গড়ে তুলল। গ্রামের মানুষ তাকে বিশ্বাস করা শুরু করল। দূর-দূরান্তের মানুষ তাদের দৈনন্দিন সমস্যা নিয়ে মজিদের কাছে আসতো। মজিদও মাজারের উছিলায় পানি পড়া দিতো, সেই পানি পড়া খেয়ে সবার হালকাপাতলা রোগগুলো ভালো হয়ে যেত। তবে সিরিয়াস রোগগুলো পানি পড়া দিয়ে মজিদ সারাতে পারত না। যেমন: বন্ধ্যা মেয়েদের সন্তান এনে দিতে পারত না মজিদের প্লাসিবো পানি পড়া।

ভণ্ড ধর্মগুরুরা যখন থেকেই শুরু করুক না কেন, বিজ্ঞানীরা এই বিদ্যার খোঁজ পেয়েছেন ষোড়শ শতাব্দীতে। ওই সময় প্রচুর আছর হওয়া রোগীর সন্ধান পাওয়া যেত। খৃষ্টান পুরোহিতরা বাইবেল, ক্রুশ, আর হোলি ওয়াটারের সাহায্যে জিনের আছর হওয়া মানুষদের দেহ থেকে শয়তান তাড়াতেন। কিছু যুক্তিবাদী লোক আছর হওয়া লোকদের সামনে ভুয়া ক্রুস, ভুয়া বাইবেল আর ভুয়া হোলি ওয়াটার এনে জিন ঝাড়া শুরু করল। দেখা গেল, রোগীদের ঘাড় থেকে জিন বা ভূত চলে যাচ্ছে, রোগীরা সুস্থ হয়ে যাচ্ছে। এখান থেকে ওই বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করলেন যে ক্রুশ, বাইবেল, কিংবা হোলি ওয়াটার এর কোনো ভূমিকা নেই জিন তাড়ানোয়। পেচ্ছাপের পানি, অশ্লীল বই, কিংবা বাঁকাত্যাড়া যে কোনো লাঠি দিয়েই যদি রোগীর মনে সেই আমেজ বা অভিজ্ঞতা তৈরি করতে পারি, তাহলে তার ঘাড় থেকে জিন বা শয়তান চলে যাবে। (প্রকৃতপক্ষে এই জিনের আছরগুলো মূলত হিস্টেরিয়া কিংবা সিজোফ্রেনিয়া রোগ।)

একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে, হোমিও ডাক্তার বেশির ভাগ দাড়ি টুপি মাথায় দিয়ে থাকে, এক্ষেত্রেও placebo effect অনেক কাজ করে। ফ্রিতে প্লাসিবো চিকিৎসা মন্দ না তবে অনেক টাকা পয়সা খরচ করে প্লাসিবো ট্রিটমেন্ট নিয়ে সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন না।

আরও পড়ুন: আয়নার ওপাশে : প্রযুক্তিজীবী লালসালুদের নেপথ্য গল্প!

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন:

মন্তব্য করুন: